বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
শিশু সার্জারী বিভাগ
কোষ্ঠকাঠিন্য সম্পর্কিত নির্দেশিকা (রোগীদের জন্য)
কোষ্ঠকাঠিন্য কি ?
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা যখন শিশু সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হয় না। সাধারনভাবে: প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম (বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে) মলত্যাগের বেগ হওয়া, শুষ্ক মল, শক্ত ও কঠিন মল, মলত্যাগে অনেক বেশী সময় লাগা, মল ত্যাগের জন্য অনেক বেশী চাপের দরকার হওয়া, অধিক সময় ধরে মলত্যাগ করার পরও অসম্পূর্ন মনে হওয়া, মলদ্বারের আশপাশে ও তলদেশে ব্যাথা অনুভব হওয়া, এবং প্রায়ই আঙুল, সাপোজিটরি বা অন্য কোন উপায়ে মল নিষ্কাশনের প্রচেষ্টাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়ে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয় ?
সাধারনভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য নিজে একটি রোগ নয় বরং ইহা একটি অনভ্যাসের ফল।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মলত্যাগের অভ্যাসের কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। যেমন: নতুন স্কুলে যাওয়া শুরু করলে বা ভ্রমনের সময় সবার জন্য ব্যবহার করার টয়লেটে যেতে অস্বস্তিবোধের কারনে, স্কুলে দীর্ঘ সময় থাকার সময় অথবা খেলায় ব্যস্ত থাকার দরুন টয়লেটে না যাওয়া বা মলত্যাগের বেগ হলে চেপে রাখা ইত্যাদি। ব্যবহারের টয়লেট বসার জন্য স্বস্তিদায়ক না হলে স্বাভাবিক মলত্যাগ প্রক্রিয়া ব্যহত হতে পারে। এভাবে মল চেপে রাখলে মল শুকিয়ে যায় এবং আরো শক্ত হয়ে যায়, ফলে পরবর্তীতে মলত্যাগের পর মলদ্বার ফেটে যেতে পারে। এর ফলে মলত্যাগের সময় তীব্র ব্যাথা হয় এবং ভয়ে শিশু টয়লেটে যেতে চায় না। যার ফল হল আরো তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্য।
এছাড়া খাদ্যাভ্যাস জনিত কারনেও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। যেমন: আাঁশযুক্ত খাবার ও শাকসবজি কম খাওয়া, প্রর্যাপ্ত পানি পান না করা, চর্বি জাতীয় ও আমিষ জাতীয় খাবার বেশী খাওয়া, স্কুলে দীর্ঘ সময় থাকার সময় পানি পান না করা ও শিশুকে নতুন খাবার শুরু করার সময় বা শিশুর খাদ্য পরিবর্তনের কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
আবার স্বল্পসংখক ক্ষেত্রে শরীরের গঠনগত ত্রæটি বা অপারেশনের পর এবং গুরুতর রোগের কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে মলদ্বারের অন্যান্য উপসর্গ রোগের ইংগিত বহন করে থাকে।
ঔষধ ( ডায়রিয়া বন্ধের ঔষধ, পেট ব্যথার ঔষধ) সেবন, দুশ্চিন্তা, পারিবারিক অস্থিরতার ফলেও শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দুরীকরনে করনীয় কি ?
শিশুকে যেভাবে খাওয়া, পান করা, কাপড় পরিধান করা, লেখাপড়া শিখাতে হয়, একইভাবে মলত্যাগের অভ্যাস শিখানো জরুরী, যাহা সাধারনত ২ থেকে ৪ বছর বয়সের মধ্যে করতে হবে।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আধা বা এক গøাস কুসুম গরম দুধ বা জুস বা পানি খেতে দিন। তারপর ২০ মিনিট পর বাথরুমে নিয়ে গিয়ে পায়খানার জন্য বসাবেন। পায়খানা না হলেও অন্তত ৫-১০ মিনিট বসিয়ে রাখবেন।
এছাড়া প্রতিদিন দুপুর ও রাত্রে খাবার ২০ মিনিট পর একইভাবে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে পায়খানার জন্য বসাবেন। পায়খানা না হলেও অন্তত ৫-১০ মিনিট বসিয়ে রাখবেন।
যেসকল খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য করে থাকে তা থেকে শিশুকে বিরত রাখুন। যেমন: অতিরিক্ত আলু ও আলুজাতীয় খাবার, ফাষ্ট ফুড, চালের গুড়া, চিজ, পনির, কষ জাতীয় ফল, পাস্তা, চিপস, ক্রাকার, বিস্কুট, ময়দার রুটি ইত্যাদি।
আঁশযুক্ত ও বেশী পানি ধারন করে এ জাতীয় খাবার বেশী খেতে দিন। যেমন: শাক-সবজী, লাল আটা, ডাল, টমেটো, ঢেড়স, কুমড়া, লাউ, বরবটি, পেপে, আম, আনারস, কলা, আপেল, তাল,শসা, তরমুজ,শিম ইত্যাদি।
প্রতিদিন স্বাভাবিক খাবারের সময় ছাড়া ও মধ্যবর্তী সময়ে অন্তত দুই বা ততোধিকবার পানি দিয়ে তরল করে জুস বা সরবত পান করাবেন। সম্ভব না হলে অন্তত প্রচুর পানি পান করতে দিন।
নিয়মিত শিশুর পেট ম্যাসেজ করে দিন। ঐড়ঃ নধঃয দিলে ভাল হয় । শিশুকে সাইকেল চালানোর মত পা ভাঁজ করে পেটের উপর চাপ দিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম করান।
বাড়িতে এবং বিদ্যালয়ে বাথরুম পরিস্কার ও শিশুর জন্য আরামদায়ক যাতে থাকে তার ব্যবস্থা করবেন।
দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকলে যাতে সময়মত বাথরুমে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করবেন। পরিমানমত পানি পান করার ব্যাপারে উদ্ভুদ্ব করবেন। স্কুলে ব্যবস্থা না থাকলে সাথে পানি দিয়ে দিবেন। খেলার সময় বাথরুমের বেগ হলে যাতে চেপে না রেখে টয়লেটে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঝরঃু নধঃয দেয়া যেতে পারে (কুসুম গরম পানিতে লবন মিশিয়ে তাতে নিতম্ব ডুবিয়ে বসবেন)।
প্রয়োজনে শিশুকে নির্দিষ্ট মাত্রায় পায়খানা নরম রাখার ওষধ যেমন: খধপঃঁষড়ংব, গরষশ ড়ভ সধমহবংরধ সেবন করাবেন।